[সারসংক্ষেপ: এই পর্যালোচনাটি মূলত ফাইভারকে নিয়ে। ফাইভার হল এমন একটি জনপ্রিয় ডিজিটাল মার্কেটপ্লেস যেখানে ফ্রিল্যান্সারদের সার্ভিস সমূহ (গিগ) ডলারের বিনিময়ে ক্রয়-বিক্রয় করা হয়। কিন্তু বড়ই অনুতাপের বিষয়, ফাইভার একটি জনপ্রিয় ডিজিটাল মার্কেটপ্লেস হওয়া সত্ত্বেও আমরা অনেকেই আছি এ সম্পর্কে জানি না, প্রযুক্তির যুগে এসেও। ফলে জানানোর লক্ষ্যেই, ফাইভার সম্পর্কে সংক্ষেপে এই পর্যালোচনা। আপনার যদি জানার আগ্রহ থাকে, তাহলে এ লেখাটি আপনার জন্য কেননা এই লেখাটি পড়ে আপনি জানতে পারবেন, 

  • ফাইভার কি?
  • ফাইভার কি নিয়ে কাজ করে এবং কিভাবে কাজ করে?
  • ফাইভারের লক্ষ্য কি?
  • ফাইভারের টার্মগুলো কি কি?
  • ফাইভারে গিগস,গিগস-এক্সট্রা, লেভেলস?
  • রিপোর্টিং ভায়োলেশন বলতে কি বুঝায়?
  • ফাইভারে টপ রেটেড সেলার ও প্রো-সেলার বলতে কি বুঝায়?
  • ফাইভারে কিভাবে ক্রয়-বিক্রয় কার্য্য পরিচালিত হয়?
  • ফাইভারের সুবিধা-অসুবিধাগুলো কি কি?
  • কেন আপনার জন্য ফাইভার গুরুত্বপূর্ণ?

সুতরাং চলুন এ সব কিছু অল্প কথায় আলোচনা করি ]

 

ফাইভার হল এমন একটি ডিজিটাল মার্কেটপ্লেস যেখানে ফ্রিল্যান্সাররা নিজেদের গুনগত মানসম্পন্ন সার্ভিস ডলারের ($) বিনিময়ে ক্রয়-বিক্রয় করে। তথ্যমতে, ২০১০ সালে ইসরায়েলের দুজন নাগরিক মিকা কাফম্যান এবং শাই উইনারার এই মার্কেটপ্লেসটি প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে এটি পৃথিবীর শীর্ষ স্থানীয় ৩টি ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসের অন্যতম একটি।

যাইহোক, ফাইভার মূলত ফ্রিল্যান্সিং বা আউটসোর্সিং এর বিষয়সমূহ নিয়ে কাজ করে। সহজে বলতে গেলে ফ্রিল্যান্সার ও তাদের মেধা নিয়ে কাজ করে যেখানে কাজের বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে ডলারকে ব্যবহার করে।ফাইভার নিম্নলিখিত বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করে,যেমনঃ-

  • ডিজিটাল মার্কেটিং
  • গ্রাফিক এন্ড ডিজাইন
  • রাইটিং এন্ড ট্রেন্সলেশন
  • মিউজিক এন্ড অডিও
  • ভিডিও এন্ড এনিমেশন
  • ডাটা
  • বিজনিস
  • সাইটম্যাপ
  • প্রোগ্রামিং এন্ড টেক
  • লাইফস্টাইল

(সূত্র: ফাইভার ওয়েবসাইট, ২০২১)

 

উল্লেখ্য যে, ফাইভার উপরে বর্ণিত সবগুলো কাজ দুটি পন্থা অবলম্বন করে করে থাকে; 

১) ক্রয়, ২) বিক্রিয় 

ক্রয়ের ক্ষেত্রে ফ্রিল্যান্সাররা তাদের গুণগত মানসম্পন্ন কাজ বর্ণনা আকারে তাদের নিজ ফাইভার একাউন্টে প্রকাশ করে যেটাকে ফাইভারের ভাষায় বলা হয় গিগ। গিগ মূলত ক্রিয়েট গিগ অপশনে গিয়ে প্রকাশ করতে হয়। আর বিক্রয়ের ক্ষেত্রে বিভিন্ন কোম্পানি ফ্রিলান্সারদের প্রকাশকৃত গিগসমূহ চাহিদা অনুযায়ী শর্তাধীন ডলারের বিনিময়ে কিনে নিয়ে থাকে। সব মিলিয়ে এই রকম অসংখ্য ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যস্থতাকারী হল ফাইভার যেটি একটি নির্দিষ্ট কমিশনের বিনিময়ে ক্রয়-বিক্রয়ের কাজ পরিচালনা করে।

এখন আসি ফাইভারের লক্ষ্য প্রসঙ্গে,ফাইভারের লক্ষ্যগুলো বেশ সময়োপযোগী। ডিজিটাল মার্কেট ও মার্কেটিং কে সম্প্রসারিত করাই যার মূল লক্ষ্য। বর্তমানে ফাইভার গিগের ক্রেতা ও বিক্রেতাদের মাঝে “টিপস্ এন্ড ট্রিকস” মানে পরামর্শ ও কৌশলের ব্যাপারে জ্ঞান দিচ্ছে  কিভাবে গুণগত মানসম্পন্ন গিগ তৈরি করে বেশি আয় করা যায় এবং কিভাবে সেই গুনগত মানসম্পন্ন গিগকে কাজে লাগিয়ে কোম্পানির উন্নতি সাধন করা যায়।

উপরে উল্লেখিত দুটি কাজের সুবিধার্থে ফাইভার কিছু শব্দ ব্যবহার করে যেগুলোকে বলা হয় কি-ট্রাম বা মূল শব্দ। সে শব্দগুলো হল; বায়ার (ক্রেতা), সেলার (বিক্রেতা/ফ্রিলান্সার), কাস্টম অফার (ক্রেতার উদ্দেশ্যে বিক্রেতার প্রস্তাবপত্র), কাস্টম অর্ডার (বিক্রেতার কাছে ক্রেতার ক্রয়ের সম্মতিপত্র), গিগ (কাজ/সেবা), গিগ-এক্সট্রা (একই গিগে অতিরিক্ত গিগ সংযুক্ত করা অতিরিক্ত ডলারে উদ্দেশ্যে), গিগ-প্যাকেজ (ভিন্ন ধরনের সেবা/কাজ/গিগের সমন্বয়), গিগ-পেইজ (বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে গিগের বর্ণনা যেখানে থাকে), অর্ডার পেইজ (ক্রেতা-বিক্রেতা যেখানে ক্রয়-বিক্রয় সম্পর্কিত আলোচনা করে)। তবে এসবের পাশাপাশি আরেকটি বিষয় হচ্ছে, এখানে যে বারবার গিগের কথা বলছি তার ফাইভারে সর্বনিম্ন মূল্য কিন্তু ৫ ডলার।

আরো কিছু বিষয় জেনে রাখা ভালো ফাইভারে লেভেলস বলতে কি বুঝায়। সহজ ভাষায়, লেভেবস হল ফ্রিলান্সারদের কাজের স্বীকৃতি যেটি দিয়ে থাকে ফাইভার কর্তৃপক্ষ। সাধারনত প্রতি মাসের ১৫ তারিখ শর্ত সাপেক্ষে এটি দিয়ে থাকে। শর্ত সাপেক্ষে দেওয়ার উদ্দেশ্য হল, ফ্রিল্যান্সারদের মধ্যে প্রতিযোগিতা তৈরি করা যাতে করে তারা কাজের প্রতি আরো মনোযোগী হয়। তবে লেভেলস উড্ডয়ন মানেই ফাইভার থেকে নতুন কিছু সুযোগের আশার আলো। সে যাইহোক, ফাইভারে আছে মূলত ৩ ধরনের লেভেলস্, যথা; লেভল-১, ২, এবং টপ রেটেড সেলার। এখানে টপ রেটেড সেলার (শীর্ষ স্থানীয় বিক্রেতা) বলতে তাকেই বুঝায়, যার একাউন্টটির বয়স ১৮০ দিন, বিক্রয় সম্পন্ন করেছে ১০০টি, বিক্রয়-আয় আছে ২০ হাজার ডলার, বিগত ৬০ দিন ৪.৭ রেটিং এ আছে এবং যার আছে অর্ডার ডেলিভারি-রেসপন্স রেট মিলে ৯০%। যাইহোক, লেখা দীর্ঘ হওয়ার কারণে লেভেল-১ ও ২ নিয়ে এবং কিভাবে লেভেল পাওয়া যায় তা নিয়ে এই লেখায় বিস্তারিত আলোচনা করছি না, অন্য লেখায় করব। 

তবে প্রো-সেলার সম্পর্কে সংক্ষেপে বলছি, প্রকৃত পক্ষে, এটি ফাইভারের লেভেলসের অন্তর্ভুক্ত কিছু না। তবে যখন একজন সেলার/ফ্রিল্যান্সার উল্লেখিত তিনটি লেভেলস অতিক্রম করে নিজেকে কাজ/গিগ দিয়ে প্রমাণ করে যে আসলেই সে প্রফেশনাল তখন ফাইভার তার কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ তাকে বিবেচনা (ভেরিফাইড) করে ফাইভার প্রো বা প্রো-সেলার বলে। ফলশ্রুতিতে, ফাইভার তার গিগগুলোকে ভেরিফাইড করে ক্রেতার কাছে উপস্থাপন করে।

এখন আসি, রিপোর্টিং ভায়োলেশনের প্রসঙ্গে। এটি দ্বারা মূলত কি বুঝায়? বুঝায় যে কোনো ফ্রিল্যান্সার যদি ফাইভারের শর্তাবলি লঙ্ঘন করে কোন কাজ করে তাহলে তা উল্লেখ করে ফাইভার কর্তৃপক্ষের নিকট রিপোর্ট (অভিযোগ) করা। অর্থাৎ ভায়োলেশনের বিরুদ্ধে রিপোর্ট করার নামই রিপোর্ট ভায়োলেশন।

সব মিলিয়ে, ফাইভার মানেই অনেক সুবিধার সমষ্টি। যেমন অন্য মার্কেটপ্লেসের তুলনায় ফাইভারে অতি সহজে ফ্রিল্যান্সাররা গিগ তৈরি করতে পারে তেমনি অন্য ডিজিটাল মার্কেটপ্লেসের তুলনায় এখানে কম পরিশ্রম করে বেশি আয় করতে পারে। তাছাড়াও ফাইভারে আছে লেভেলস প্রক্রিয়া যা ফ্রিলান্সারদের কাজ করার আগ্রহ বাড়ায়। তবে সবকিছুর উর্ধ্বে হল, ফাইভারে পাওয়া যায় এমন কিছু ফ্রী অনলাইন ফ্রিল্যান্সিং কোর্স যা ডলারে কিনতে গেলে অনেক। পক্ষান্তরে, এ সকল সুবিধার পাশাপাশি ফাইভারের অনেক অসুবিধাও আছে। তার মধ্যে অন্যতম হল ডলার হস্তান্তরে দীর্ঘসূত্রতা। ফ্রিল্যান্সারদের একটি গিগ বিক্রি হওয়ার পর ফাইভার ক্রেতার কাছ থেকে ডলার নিয়ে ১৪ দিন নিজ সংরক্ষণে রাখে তারপর বিক্রেতাকে ঐ ডলার হস্তান্তর করে। এর কারণ হল ক্রেতার কাছে যদি নেতিবাচক রিভিউ আসে তাহলে তাকে যেন সে ডলার ফেরত দিয়ে দিতে পারে। ফাইভারে এই প্রক্রিয়ার থাকার কারণে ফ্রিল্যান্সাররা কাজের আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। এরও পাশাপাশি ফাইভারে আছে, একাউন্ট নিয়ে শঙ্কা প্রবণতা। কেননা একটি একাউন্ট যদি কখনো রিপোর্টং ভায়োলেশনের অধীনে পড়ে যায় তাহলে একাউন্টধারীকে কোন সতর্কবার্তা না দিয়েই ফাইভার সেই একাউন্ট ডিলিট করে দেয়।

সর্বশেষ, সুবিধা-অসুবিধা নিয়েই আমাদের সবকিছু। ভালো-মন্দ দিক সব বিষয়েরই কম-বেশি আছে। সুতরাং ফাইভারের সামান্য কয়েকটি অসুবিধা নিয়ে এত মাথা ব্যাথা না থাকায় ভালো। প্রসঙ্গের স্রোতে বলতে হয় আমি যখন তথ্য অনুসন্ধান করেছি তখন দেখেছি ফাইভারের মন্দের চেয়ে ভালোর দিক বেশি। যে কারণে মনে করছি, ফাইভার আমাদের কাজের সঙ্গী হওয়া উচিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *