7-best-freelancing-website

শীর্ষ ৭টি ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইট

আধুনিক প্রযুক্তির যুগে, দিন দিনই ফ্রিল্যান্সিং জগতের প্রসার হচ্ছে। ফলে গুটিক’ (কম) থেকে কোটিতে পরিনত হচ্ছে ফ্রিলান্সারের সংখ্যা। বর্তমানে ফ্রিলান্সারের সংখ্যায় বাংলাদেশের অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রের থেকেও এগিয়ে। আছে দ্বিতীয় পর্যায়ে যেখানে ভারত প্রথম। বলার অপেক্ষা রাখে না, দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে এই ফ্রিল্যান্সারদের ভূমিকা অতুলনীয়।

প্রকৃত পক্ষে, দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে তারা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।যে-কারণে তাদেরকে বলা হয়, দেশের মেরুদণ্ডের (অর্থনীতি) অন্যতম অংশীদার। বস্তুত,তারা এই কৃতিত্ব অর্জন করেছে শীর্ষ স্থানীয় কয়েকটি ওয়েবসাইটকে কাজে লাগিয়ে। কিন্তু সে ওয়েবসাইটগুলো কি কি, তা আমরা অনেকেই জানি না। অতএব, আপনি যদি না জানার দলে পড়েন, তাহলে এ লেখাটি একান্তই আপনার জন্য। কেননা এই লেখাটি পড়ার পর আপনি ঐসব ওয়েবসাইট সম্পর্কে অল্পকথায় অনেক কিছু জানতে পারবেন। সুতরাং, চলুন কথা না বাড়িয়ে সেসব শীর্ষ স্থানীয় ৭টি ওয়েবসাইট নিয়ে আলোচনা করি।

১.আপওয়ার্ক-Upwork  (সাইট লিংক: https://www.upwork.com/)

বর্তমানে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ডিজিটাল মার্কেটপ্লেসের নাম আপওয়ার্ক। যেটি ২০১৩ সালে ওডেক্স (২০০৩) এবং ইল্যান্সের সমন্বয়ে অডিসিয়াস সাতালস এবং স্ত্রাতিস কারামানলাকিসের হাত ধরে গড়ে উঠেছিল।আপওয়ার্ক প্রধানত ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, ওয়েব ডিজাইন, ভিডিও মার্কেটিং, এসইও, গ্রাফিকস ডিজাইন, আর্ট ডিরেকশন, ডাটা এন্ট্রি, প্রোগ্রামিং, অনুবাদ, বিজ্ঞাপন, ইত্যাদি নিয়ে কাজ করে।

আপওয়ার্কের বড় সুবিধা হল, এখানে ইচ্ছে মতো কাজ করা যায় কেননা আপওয়ার্কে রয়েছে ঘণ্টা ভিত্তিক কাজ আবার ফিক্সড রেটের কাজ। তার থেকে বড় কথা এখানে পেমেন্ট প্রক্রিয়াতে আছে বেশ স্বচ্ছতা যে কারণে এখানে পাওয়া যায় বিশ্বস্ত ক্লায়েন্ট। তবে এই সুবিধাসমূহের পাশাপাশি আছে কিছু অসুবিধাও, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল এখানে একটি সেবার বিনিময়ে বড় এমাউন্ট গুণতে হয়।

সবকিছুর বিবেচনায়, বর্তমানে আপওয়ার্ক ফ্রিল্যান্সারদের সবচেয়ে পছন্দের ও স্বাচ্ছন্দ্যের মার্কেটপ্লেস। কেননা একজন ফ্রিল্যান্সার একই কাজ দিয়ে অন্য মার্কেটপ্লেসের তুলনায় এখানে বেশি আয় করতে পারে। সুতরাং কোটিপতি হওয়ার প্রসঙ্গে পছন্দের তালিকায় শীর্ষে রাখা যায় ‘আপওয়ার্ক’ কে। 

০২. ফাইভার -Fiverr (সাইট লিংক: https://www.fiverr.com/)

ফাইভার হল একটি ডিজিটাল মার্কেটপ্লেস যেখানে ফ্রিল্যান্সাররা নিজেদের গুনগত মানসম্পন্ন সেবা ডলারের ($) বিনিময়ে ক্রয়-বিক্রয় করে। তথ্যমতে, ২০১০ সালে ইসরায়েলের দুজন নাগরিক মিকা কাফম্যান এবং শাই উইনারার এই মার্কেটপ্লেসটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বর্তমানে এটি পৃথিবীর শীর্ষ স্থানীয় ৩টি ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসের অন্যতম একটি।

ফাইভার মূলত ফ্রিল্যান্সিং বা আউটসোর্সিং এর বিষয়সমূহ নিয়ে কাজ করে। সহজে বলতে গেলে ফ্রিল্যান্সার ও তাদের মেধা নিয়ে কাজ করে। আর সেই মেধা ভিত্তিক কাজগুলো হল- ডিজিটাল মার্কেটিং, গ্রাফিক্স ডিজাইন, অনুবাদ, অডিও মিউজিক, ভিডিওগ্রাফি, এনিমেশন, ডাটা এন্ট্রি, প্রোগ্রামিং এবং লাইফস্টাইল, ইত্যাদি।

সব মিলিয়ে ফাইভার মানেই অনেক সুবিধার সমষ্টি। যেমন, গিগ তৈরি করা যায় সহজে, কম পরিশ্রম করে বেশি আয় করা যায়,লেভেলস প্রক্রিয়া ফ্রিলান্সারদের কাজে আগ্রহ বাড়ায় এবং ফ্রীতে মেলে অনেক অনলাইন ফ্রিল্যান্সিং কোর্সের সুযোগ। পক্ষান্তর আছে কিছু অসুবিধাও। যেমন, পেমেন্ট হস্তান্তরে দীর্ঘসূত্রতা ও একাউন্ট নিয়ে শঙ্কা প্রবণতা।

যাইহোক, বেশি সুবিধার-কম অসুবিধার বিবেচনায় ফাইভার হতে পারে আরো একটি পছন্দের শীর্ষ ডিজিটাল মার্কেটপ্লেস।

০৩.ফ্রিল্যান্সার ডট কম-Freelancer.com  (সাইট লিংক:https://www.freelancer.com)

বর্তমানে বহুল পরিচিত আরেকটি ডিজিটাল মার্কেটপ্লেসের নাম, ফ্রিল্যান্সার ডট কম। যেটি ২০০৯ সালে স্ট্রেলিয়ার নাগরিক ম্যাট ব্যারি প্রতিষ্ঠান করেছিলেন। তথ্যমতে, এই মার্কেটপ্লেসটির সদর দপ্তর রয়েছে আস্ট্রেলিয়ার সিডনি শহরে। 

ফ্রিল্যান্সার ডট কম প্রধানত, ওয়েভ ডেভেলপমেন্ট, অনুবাদ, ও মিডিয়া মার্কেটিং নিয়ে কাজ করে। যারা এই তিনটি সেক্টরে বেশি পারদর্শী, মূলত এই সাইটি তাদের জন্য। 

এই সাইটে কাজের ক্ষেত্রে বড় সুবিধা হল, বায়ার এবং সেলার পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে লাইভ ভিডিও চ্যাট করতে পারে। তাছাড়াও এই সাইটে আছে ২৪/৭ (২৪ ঘন্টা/১ সপ্তাহ) কাস্টমস সহযোগিতা। আর অসুবিধা বলতে, বেশি বেশি ভুয়া ক্লায়েন্ট পাওয়া যায় যার কারণে এই সাইটে প্রতারণার শিকার হওয়ার প্রবণতা বেশি।

আমার মতে যারা নতুন, তাদের জন্য এই সাইটটি বেশি ফলপ্রসূ না। তবে যারা একটু বেশি পারদর্শী এবং চাতুর তাদের জন্য এই সাইটটি টাকা আয়ের অন্যতম মাধ্যম। 

০৪. গুরু ডট কম-Guru.com (সাইট লিংক: https://www.guru.com/)

ফ্রিল্যান্সিং জগতের একটি পুরাতন মার্কেটপ্লেসের নাম গুরু ডট কম। ১৯৯৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভ্যানিয়ার টিসবার্গে এটি প্রথম প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। যার প্রাসঙ্গিকতা এখনো বিদ্যমান।

আসলে গুরু ডট কম অন্যদের ন্যায় বেশি কিছু নিয়ে কাজ করে না। কিছু বিশেষ বিষয় নিয়ে কাজ করে। তার মধ্যে অন্যতম ডিজিটাল মার্কেটিং, প্রোগ্রামিং, ও প্রশাসনিক কাজকর্ম।

পুরাতন হলেও এই সাইটি ফ্রিল্যান্সার ডট কম এর মতো এত জটিল না। কাজের ক্ষেত্রটাও নির্দিষ্ট। একারণে এখানে পেমেন্টের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা সুবিধা অধিক। তার উপরেও আছে, ফ্রিতে একাউন্ট খোলার সুযোগ। কিন্তু বড় অসুবিধা হল, এই সাইটে ভুয়া ক্লায়েন্টের সমাগম বেশি। ফলে প্রতারণা শিকার হওয়ার প্রবণতাও বেশি। সবকিছু বিবেচনায়, টাকা আয় করার ক্ষেত্রে এই সাইটি একেবারে ফেলনা নই, চলনসই। 

০৫.৯৯ ডিজাইনস্ -99designs (সাইট লিংক: https://99designs.com/)

৯৯ ডিজাইনস্ হল যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রান্সিসকো ভিত্তিক একটি ডিজিটাল মার্কেটপ্লেস। যেটি শুধুমাত্র গ্রাফিক্স ডিজাইন নিয়ে কাজ করে। যারা গ্রাফিক্স ডিজাইনে বেশ পারদর্শী, শুধু তাদের জন্যেই টাকা আয়ের অন্যতম প্ল্যাটফরম ৯৯ ডিজাইনস্।

এই সাইটের সুবিধা হল, যারা এখানে কাজ করে তাদের যে কমিউনিটি তা বেশ সক্রিয়। এবং অল্প কাজে বেশি টাকা পায়, পেমেন্ট সিকিউরিটি বেশ ভালো। তবে অসুবিধা হল, যত খুশি তত গ্রাফিকস ডিজাইন নিজের একাউন্টে প্রদর্শন করে রাখা যায় না, একেবারে লিমিটেড। তারচেয়েও বড় অসুবিধা, এখানে সেবার মূল্য লাগামবিহীন অর্থাৎ বেশি। 

তবে আপনি যদি প্রফেশনাল গ্রাফিক্স ডিজাইনার হন, তাহলে এই সাইটি অবশ্যই আপনার জন্য। 

০৬. টপটাল-Toptal (সাইট লিংক: https://www.toptal.com/)

আধুনিক যুগের বিশ্বের অন্যতম ডিজিটাল মার্কেটপ্লেসের নাম টপটাল। ২০১০ সালে আমেরিকার নাগরিক তাসু-দু-ভাল (Tasu Du Val) এটি প্রতিষ্ঠা করেন। এই সাইটি মনে করেন, তারা পৃথিবীর সেরা ৩% ফ্রিল্যান্সার তাদের অধীনে রয়েছে।

এই সাইটি মূলত কাজ করে, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, ও ফ্রিল্যান্সিং কনসালট্যান্টসি নিয়ে। আসলে এই সাইটি সেরাদের ওয়েবসাইট। সুতরাং এখানে কাজ করার বড় সুবিধা হল, সবচেয়ে পারদর্শিদের সাথে থাকা। তবে বড় অসুবিধা হল, এখানে দীর্ঘমেয়াদি কাজ করতে হয় যেকারণে অনেক সময় ফ্রিল্যান্সারদের একঘেয়ে ভাব চলে আসে।

তারপরও পারদর্শিদের সাথে থাকা মানে নতুন কিছু শেখা, সে অর্থে আপনি সফটওয়্যার ডেভেলপার হলে এখানে কাজ করে যেমন দক্ষ হতে পারেন তেমনি বেশি আয় করতে পারেন।

০৭.পিপল পার আওয়ার-People Per Hour (সাইট লিংক: https://www.peopleperhour.com)

পিপলস পার আওয়ার, নামের মধ্যেই কেমন জনপ্রিয়তার ঘ্রাণ। আসলেও তাই, ফ্রিল্যান্সিং জগতের এটি একটি জনপ্রিয় ওয়েবসাইট। বর্তমানে এটি ১ মিলিয়ন ফ্রিল্যান্সার নিয়ে কাজ করছে। যাইহোক, পিপলস পার আওয়ার ২০০৭ সালে যুক্তরাজ্যের দুই ভদ্রলোক, Xenios Thrasyvoulou, Simos Kitiris হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলেন। 

এই সাইটি প্রধানত তিনটি বিষয় নিয়ে কাজ করে, এক) সাংবিধানিকতা, দুই) প্রোগ্রামিং, ও তিন) ব্রান্ডিং। সত্যি বলতে এখানে ফিক্সড রেটের কাজ বেশি হওয়ার নতুনদের জন্য এই সাইটটি বেশ সুবিধার। তার চেয়েও বড় সুবিধা এই সাইটের কাজ নিজ এলাকাতে করা যায়। তবে অসুবিধা হল, এটি ফ্রি বিড নির্ধারণ করে দেয়, যেমন; প্রতি মাসে ১৫ ডলার।

সর্বশেষ, আমি মনে করি আপনি যদি সত্যিই একজন প্রোফেশনাল ফ্রিল্যান্সার হন, তাহলে এখানের প্রত্যেকটি সাইট আপনার জন্য সমান গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এতে করে চাহিদা অনুযায়ী আপনার কাজের মধ্যে পরিবর্তন আসবে। আর কাজের মধ্যে যত পরিবর্তন আনা যায়, ততই বেশি টাকা আসে। সুতরাং সব সাইটের এন্ট্রি নিয়ে রাখেন। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *