digital-bangladesh

ডিজিটাল বাংলাদেশ ২০২২

ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রথম ধারণাটি আসে ২০০৮  সালের ১২ ডিসেম্বর,যখন আওয়ামী লীগের দলীয় ইশতেহারে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনের ইশতেহারে বলেন, “স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশ একটি ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত হবে!” 

এরপর ‘বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি’ ২০০৯ সালের ১২ থেকে ১৭ নভেম্বর, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ সামিট’ নামক প্রথম শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করে, যেখানে ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা এবং এর অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়।

এবং এরপর থেকেই এ বিষয়ে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ গ্রহণ করা শুরু হয়। 

মূলত একটি জ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক উন্নত  দেশ গঠন করার পাশাপাশি আইসিটি বেসড মানবসম্পদ উন্নয়ন, ইন্টারনেটের সংযোগ ও সহজলভ্যতা  বৃদ্ধি, ই-প্রশাসন গড়ে তোলা এবং তথ্যপ্রযুক্তিকে শিল্পখাত হিসেবে গড়ে তোলাই ছিলো ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রধান মূল লক্ষ্য। 

জানুয়ারী, ২০২২ পর্যন্ত বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা ছিলো প্রায় ১৬৭.১ মিলিয়ন। এদের মাঝে ৩৯.৭ শতাংশ মানুষ শহরে এবং  ৬০.৩ শতাংশ মানুষ গ্রামে বাস করে। 

মজার ব্যাপার হলো-মোট জনসংখ্যার  প্রায় ৫২.৫৮ মিলিয়ন মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে।অর্থাৎ প্রায় অর্ধেকের কাছাকাছি মানুষের সরাসরি ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত। শুধুমাত্র গত এক বছরেই দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়েছে ৫.৫ মিলিয়ন, অর্থাৎ প্রায় ১১.৬ শতাংশ। এটি আশাব্যঞ্জক। 

সম্প্রতি অকলার প্রকাশ করা একটি ডাটা অনুযায়ী বলা যায়,বাংলাদেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা ২০২২ সালের শুরুতে 

সেলুলার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে মোবাইল ইন্টারনেট সংযোগের গতি ১০.৪২ Mbps পেতে পারে।

মিডিয়ান ফিক্সড  ইন্টারনেট সংযোগের গতি ৩০.১৬ Mbps.এটি আরও বলে যে, বাংলাদেশে মিডিয়ান মোবাইল ইন্টারনেট সংযোগের গতি ২০২২ সালের শুরু থেকে বারো মাসে ৩.১৯ Mbps (+৪৪.১শতাংশ) বেড়েছে.আর বাংলাদেশে স্থির ইন্টারনেট সংযোগের গতি একই সময়ে ৮.৯২ এমবিপিএস (+৪২.০ শতাংশ) বেড়েছে।

ইন্টারনেট সহজলভ্যতার ফলে দেশে জানুয়ারি ২০২০ পর্যন্ত  অনলাইনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারী ৪৯.৫৫ মিলিয়ন যা মোট জনসংখ্যার ২৯.৭%. Kepios এর মতে গত এল বছরে এটি বেড়েছে ৪.৬ মিলিয়ন অর্থাৎ প্রায় ১০.১% এর মাঝে ফেসবুক ব্যাবহারকারী প্রায় ৪৪.৭৭ মিলিয়ন,ইউটিউব ব্যবহারকারী ৩৪.৫০ মিলিয়ন।

পাশাপাশি GSMA ইন্টেলিজেন্সের তথ্য অনুযায়ী ২০২২ সালের শুরুতে বাংলাদেশে সেলুলার মোবাইল সংযোগ ছিল প্রায়

১৭৮.৫ মিলিয়ন। এই মোবাইল সংযোগগুলি জানুয়ারী ২০২২ সালে মোট জনসংখ্যার ১০৬.৮ শতাংশের সমান ছিল।

গত এক বছরে যেটা ১০ মিলিয়ন (+৬.২ শতাংশ) বেড়েছে। 

বর্তমানে সারাদেশে উন্নত ও দ্রুতগতির ইন্টারনেট সংযোগ এবং দেশের বাইরে যোগাযোগের জন্য বাংলাদেশ বর্তমানে SEA-ME-WE-4 ও SEA-ME-WE-5 নামের দুইটি সাবমেরিন ক্যাবলের সঙ্গে যুক্ত।

বাংলাদেশের পদযাত্রায় ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত প্রায় ১৮ হাজার ৯৭৫ কি.মি.অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল স্থাপন, ২০০৪ টি ইউনিয়ন পর্যন্ত ওয়াই-ফাই রাউটার স্থাপন এবং ১৪৮৩ টি ইউনিয়নকে নেটওয়ার্ক মনিটরিং সিস্টেমে এ সংযুক্ত করা হয়েছে।

দেশকে ডিজিলাইজড করার অন্যতম শর্ত ছিলো সরকারের সমস্ত তথ্য ও সেবা দেশের প্রতিটি প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া।

আজ স্বাধীনতার ৫০ বছর পর সরকারকে তার লক্ষ্য মাত্রায় প্রায় সফলই বলা যায়।

বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন ওয়েব পোর্টাল বা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সরাসরি জনগণের দোরগোড়ায় পৌছে যাচ্ছে।আমাদের সরকারি ওয়েবপোর্টাল হলো  www.bangladesh.gov.bd. 

এরই ধারাবাহিকতায় সরকারি সেবা ও তথ্য দেশের প্রতিটি  প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত ছড়িয়ে দিতে আমাদের দেশেই তৈরি করা হয়েছে বেশ কয়টি সরকারি মোবাইল হেল্পডেস্ক। এই ডেস্কগুলোর নির্দিষ্ট নাম্বরে টোল ফ্রি সেবায় কল করার মাধ্যমে মানুষ সরকারি তথ্য ও সেবা পেয়ে যাচ্ছে মূহুর্তেই।

বর্তমানে এমন বেশ কয়েকটি সরকারি হটলাইন নাম্বার হলো- জরুরি সেবার জন্যে- (পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও এ্যাম্বুলেন্স) -৯৯৯;

সরকারি তথ্য ও সেবার জন্যে- ৩৩৩;শিশু ও নারী নির্যাতন প্রতিরোধ রোধে- ১০৯;দুদক-১০৬; দুর্যোগের আগাম বার্তা-১০৯০; ইত্যাদি।

সরকারি – বেসরকারী সম্মিলিত ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষে প্রায় সমস্ত কিছু ডিজিটালাইজেশন এর আওতাধীন। 

বর্তমানে দেশের ৬৪টি জেলাতেই ই-সেবা কেন্দ্র থেকে জমি-জমা সংক্রান্ত বিভিন্ন দলিলের সত্যায়িত অনুলিপি সংগ্রহ করতে পারে।

বাংলাদেশে অনলাইন বাণিজ্য ধারণার ব্যাপক বিস্তৃতির কারণে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ই-কমার্স সাইট।

সরকারিভাবে শিক্ষার্থীদের জন্য একটি ই-বই প্ল্যাটফরম তৈরি হয়েছে।

শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যাপক ইন্টারনেট সংযোগের ফলে বর্তমানে দেশে গড়ে উঠেছে “রবি 10 মিনিট স্কুল’,”শিখো” র মতো বিভিন্ন অনলাইন  প্ল্যাটফর্ম।

নাগরিকদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে দেশের  বিভিন্ন স্থানে তৈরী হয়েছে ‘টেলিমেডিসিন সেবাকেন্দ্র। 

বাড়িতে বসেই এখন আয়করদাতারা আয়করের হিসাব,এবং রিটার্ন তৈরি ও দাখিল করতে পার।

পোস্টাল ক্যাশ কার্ড, মোবাইল ব্যাংকিং, ইলেক্ট্রনিক মানি ট্রান্সফার সিস্টেম ইত্যাদির মাধ্যমে বর্তমানে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে অর্থ প্রেরণ তুলনামূলক সহজ ও দ্রুততর হয়েছে। ইন্টারনেট ও অনলাইন ব্যাংকিং বর্তমানে খুবই জনপ্রিয়। 

বর্তমানে গ্রাহকরা ঘরে বসেই বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাস বিল পরিশোধ করতে পারেন।

সকল পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ; স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদন,পরীক্ষার নিবন্ধন,চাকরির আবেদন, জন্ম নিবন্ধন,ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন ইত্যাদি অনলাইনেই হচ্ছে।

এছাড়াও প্রায় সকল ট্রেন, বাস ও প্লেনের টিকিট অনলাইনে বা মোবাইলে সংগ্রহ করা যায়।

ডিজিটাল বাংলাদেশ রুপকল্পের অন্যতম এচিভমেন্ট হচ্ছে,২০১৮ সালের ১২ মে মহাকাশে প্রেরণ করা বাংলাদেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’।

আমাদের আরেকটি অর্জন হলো সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে এই বাংলাদেশের প্রযুক্তিবিদরাই তৈরি করেছেন ‘ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন’ বা ইভিএম।বর্তমানে জাতীয় এবং বিভিন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে এর ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আমাদের গর্বিত হওয়ার মতো আরেকটা পদক্ষেপ হচ্ছে আমাদের যুবসমাজ,বিশেষ করে তরুনেরা প্রযুক্তিগত পেশার দিকে ঝুকছে।আজকাল অনেকেই নির্দিষ্ট চাকুরি জীবন বাইরে গিয়ে স্বাধীন ব্যাবসা ফ্রি-ল্যান্সিং এর দিকে এগুচ্ছে এবং অনেকেই সফলতার পরিচয় দিচ্ছে।দিন দিন এটা একটা শিল্পে রূপান্তরিত হচ্ছে।

ডিজিটাল বাংলাদেশের যে স্বপ্ন প্রধানমন্ত্রী দেখেছিলেন সেটা এখন আর স্বপ্নে আবদ্ধ নেই।

আমরা প্রতিনিয়তই এই পথ ধরেই একটি সুন্দর জীবনের দিকে এগুচ্ছি।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *