ওয়েব ডিজাইনিং এ হোক উপার্জন

আমরা যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকি আমাদের সকলেরই ওয়েবসাইট সম্পর্কে ধারনা থাকার কথা, কেননা আমরা প্রতিনিয়ত ওয়েবসাইটের ব্যবহার করে চলেছি। ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট হলো ইন্টারনেট জুড়ে ছড়িয়ে থাকা ওয়েবসাইট সমূহের ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম। প্রযুক্তির এই বিশ্বে ইন্টারনেট ছাড়া আমাদের বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে, আর ইন্টারনেটের সকল সেবা প্রদান করা হয় কোননা কোন ওয়েবসাইটের মাধ্যমে। অর্থাৎ আমাদের সকল সেবার কেন্দ্রবিন্দু বলা চলে ওয়েবসাইটকে। 

ওয়েব ডিজাইন  আসলে কি?  

কেন এই ওয়েব ডিজাইন  সম্পর্কে আমাদের জানা প্রয়োজন ? বাস্তব জীবনে এর প্রয়োগ কোথায়? কিভাবে আমরা এই কাজটি করতে পারি? কারা এই কাজগুলো করতে পারবে? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানতে চাইলে এই লেখাটি আপনার জন্য। 

ওয়েবসাইট হলো তথ্য সমৃদ্ধ এবং ইন্টারনেট নির্ভর একটি সাইট।  সকল প্রকার ইন্টারনেট সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য একটি স্থান প্রয়োজন আর তা হচ্ছে ওয়েবসাইট। আমরা অনেক সময় ওয়েব ডিজাইন আর ওয়েব ডেভেলপমেন্টকে এক ভাবতে থাকি কিন্তু আসলে এই দুটো বিষয় এক নয়। তাহলে এই দুটো বিষয়ের মধ্যে পার্থক্য কি? 

ওয়েব ডিজাইন হলো কোন একটা ওয়েবসাইটের স্ট্রাকচার গঠন অর্থাৎ এর আকার আকৃতি বা কার্য পদ্ধতি ইত্যাদি নিয়ে কাজ করাকে বুঝায়। অপরদিকে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট হলো কোন একটা ওয়েবসাইটের কার্যক্রম পরিচালনা করা। যেকোন ওয়েবসাইটকে সচল রাখার জন্য প্রয়োজন প্রোগ্রামিং আর এই প্রোগ্রামিং এর কাজটি করে থাকে ওয়েব ডেভেলপাররা। 

ওয়েবসাইট ডিজাইন করার জন্য প্রয়োজন সৃজনশীল মনোভাব এবং নান্দনিক দৃষ্টিভঙ্গি। একটি ওয়েবসাইটের সাথে অন্য ওয়েবসাইটের মিল থাকলে বিষয়টি দৃষ্টিকটু দেখায় ফলে সকল কোম্পানি চিন্তা করে ইউনিক কিছু একটা করার, এর ফলে সৃজনশীল মেধার অধিকারী ফ্রিল্যান্সাররা এই ধরনের কাজকেই বেছে নেয় জীবিকা নির্বাহের অংশ হিসেবে। সুন্দর ও মানানসই ওয়েবসাইট গঠন করতে পারলে তা তৈরি করে বিভিন্ন মার্কেটপ্লেসে বিক্রয় করা সম্ভব। 

কাজের ধরন বিবেচনায় ওয়েবসাইটকে দুইভাবে ভাগ করা যায়। 

 স্ট্যাটিক ওয়েবসাইট 

এই ধরনের ওয়েবসাইটে নতুন কিছু যুক্ত বা কোন কিছু বাদ দিতে হলে মূল কোডিং এ পরিবর্তন করতে হয়। প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল ওয়েবসাইটের ক্ষেত্রে এটি ব্যবহার অনুপযুক্ত, ফলে বর্তমানে এই ধরনের ওয়েবসাইট সচরাচর দেখা যায় না। 

 ডাইনামিক ওয়েবসাইট 

এই ধরনের ওয়েবসাইট সাধারণত যেকোন মূহুর্তে যেকোন তথ্য হালনাগাদ করা সম্ভব হয়। প্রতিনিয়ত ব্যবহার করা সকল ওয়েবসাইটই এখন ডাইনামিক ওয়েবসাইট। বর্তমানে সর্বাধিক ব্যবহৃত ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব ইত্যাদি ডায়নামিক ওয়েবসাইট স্ট্রাকচারে গঠিত।

কেন ওয়েব ডিজাইন  সম্পর্কে জানা প্রয়োজন?

প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে সাথে নতুনত্বের হাওয়া যখন সবক্ষেত্রেই বইতে শুরু করেছে তখন প্রযুক্তির সাথে নিজকে খাপ খাইয়ে নেয়াই যুক্তিযুক্ত। ইন্টারনেটের এই যুগে যখন সব কিছুতেই ওয়েবসাইটের ব্যবহার তখন নিজেকে এই ক্ষেত্রে দক্ষ করে গড়ে তুলে উপার্জনের মাধ্যমে হিসেবে এটিকে বেছে নিলে ক্ষতি কি। এজন্যই বর্তমানে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছ ঘরে বসে ইন্টারনেটের মাধ্যমে উপার্জন করার এই পদ্ধতি। মূলত চাকরির পেছনে ছুটে সময় নষ্ট না করে বরং আত্মকর্মসংস্থান খুঁজে নিতেই প্রয়োজন ওয়েবসাইট বা ওয়েব ডিজাইন  সম্পর্কে জানা। 

বাস্তব জীবনে ওয়েব ডিজাইন  এর প্রভাব 

ধরুন আপনার ছোট বোন এসএসসি পরিক্ষার্থী, কয়েকদিন পর তার রেজাল্ট বের হলো। এখন আপনি কি তার রেজাল্ট আনার জন্য স্কুলের বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকবেন নাকি ঘরে বসেই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট থেকে রেজাল্ট দেখে নিবেন। অবশ্যই আপনি দ্বিতীয়টিকেই বেচে নিবেন কেননা এটি সহজসাধ্য ও পরিশ্রম বিহীন। এভাবেই ওয়েবসাইট প্রতিনিয়ত আমাদের কাজের পরিধি সহজ, দ্রুত ও সুন্দর করে তুলছে। আর ওয়েবসাইট তৈরির কাজটিই হলো ওয়েবসাইট ডিজাইন। 

কিভাবে এই কাজটি করা যায়?

এই কাজ করতে হলে কয়েকটি বিষয়ের উপর বিশেষভাবে নজর দিতে হবে। 

★ প্রোগ্রামিং ভাষায় যথেষ্ট জ্ঞান থাকতে হবে কেননা এই কাজটি মূলত কোডিং এর উপর নির্ভরশীল।  কোডিং সঠিকভাবে করতে পারলে এই পেশায় আপনাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হবে না। 

★ যেহেতু মার্কেটপ্লেসে কাজ করতে হবে সুতরাং ইংরেজি ভাষায় যথেষ্ট জ্ঞান থাকতে হবে। ইংরেজিতে পারদর্শী হলে কিছুটা অতিরিক্ত সুবিধা পাওয়া যায়। 

★ যেহেতু কাজটি কোডিং এর সুতরাং এখানে যথেষ্ট সময় দিয়ে এবং সুক্ষ ভাবে কাজ করতে হবে। তাড়াহুড়ো করে এই প্লাটফর্মে কাজ সঠিকভাবে করা যায় না। 

★ অবশ্যই ইন্টারনেট সার্ভিসসহ কম্পিউটার বা মোবাইল ফোন থাকতে হবে। 

★ কাজটি যেহেতু সময়সাপেক্ষ সুতরাং ধৈর্যসহকারে কাজ করতে হবে। 

★ ক্লায়েন্টের সাথে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। 

কারা এই ধরনের কাজ করতে পারবে?

এ ধরনের কাজ যেহেতু সময়সাপেক্ষ এবং কোডিং নির্ভর এক্ষেত্রে তরুণ সমাজ এই কাজে যথেষ্ট অগ্রাধিকার লাভ করবে। তরুণদের অবসর সময়ে ঘরে বসে এই কাজের মাধ্যমে অর্থ উপার্জনের যেমন সুযোগ আছে ঠিক তেমনি রয়েছে নিজের স্কিল ডেভেলপমেন্টের সুযোগ যা পরবর্তীতে বিভিন্ন সেক্টরে কাজে আসতে পারে। তরুণ সমাজকে এই কাজে উদ্বুদ্ধ করা গেলে বেকারত্বের মতো একটি সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। 

এখন আসি কিভাবে আয় করা যায়?

বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের প্রতিষ্ঠানের জন্য ওয়েব ডিজাইনার চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে থাকে এবং মোটা অংকের অর্থ প্রদান করে। এছাড়াও ফ্রিল্যান্সার হিসেবে বিভিন্ন সাইটের ওয়েব ডিজাইন  করেও অর্থ উপার্জনের সুযোগ রয়েছে।

নিজের তৈরি ওয়েবসাইটের মাধ্যমেও অর্থ উপার্জন সম্ভব। 

প্রযুক্তির আলো সারা বিশ্বের মতো ছড়িয়ে পরছে বাংলাদেশেও। বাংলাদেশের অনেক তরুণ বিভিন্ন ধরনের অনলাইন প্লাটফর্মে কাজ করে উপার্জন করছে। যদি তরুণ সমাজকে ওয়েব ডিজাইন  সম্পর্কে সঠিক ধারণা দেয়া যায় এবং তাদেরকে ট্রেইনিং দিয়ে প্রস্তুত করা যায় তবে বেকারত্ব নিরসনের পাশাপাশি দেশের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন করা সম্ভব।  আমাদের মতো অধিক জনসংখ্যার দেশের জন্য অনলাইন ভিত্তিক এই ধরনের কার্যক্রম আর্শীবাদস্বরূপ। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *