how-to-income-by-video-editing

ভিডিও এডিটিং করে আয় করার ৭ উপায়

আজকাল হাতে থাকা ডিভাইসটি অন করলেই স্কিনে ভেসে ওঠে নানান রকম ভিডিও। যা আশির দশকের আগেও, শুধুই ছিল কল্পনা। আজ বিশ্ব এগিয়েছে, এগিয়েছে তার প্রযুক্তির স্লট। ধীরে ধীরে পৃথিবীটা হয়ে উঠছে রঙিন, বিশ্ব হচ্ছে সংকীর্ণ। তথ্যমতে, ১৯৮০ সালে এশিয়া মহাদেশে তথা লাল সবুজের দেশ, বাংলাদেশে প্রথম রঙিন টেলিভিশনের সূত্রপাত, তারপর ২০০৫ সালে এসে ইউটিউবের আগমন। সব মিলিয়ে দিন দিনই যেন ভিডিওগ্রাফির কদর বাড়ছে। কেনই বা বাড়বে না; শিক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে রান্নার রেসিপি, বিয়ের আনন্দঘন সময়, আজ সব কিছুই মেলে ভিডিওর এ্যালবামে। তবে, এই ভিডিওগ্রাফির সাথে, কদর বেড়েছে ভিডিও এডিটিং এরও। এর কারণ, যে ভিডিও যত স্পষ্ট, মসৃণ ও কলহমুক্ত সে ভিডিওর তত ভিউ, তত অর্থ।

অতএব, ‘যত ভিউ তত অর্থ’ এই নেশায় যদি আপনি আসক্ত হয়ে থাকেন বা ভিডিও এডিটিং করে আয় করার নেশা থাকে, তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্যে। কেননা, এই লেখাটিতে আপনি জানতে পারবেন ভিডিও এডিটিং কি, কোন সফটওয়্যার দিয়ে প্রফেশনাল ভিডিও এডিটিং করা যায়, এবং কিভাবে ভিডিও এডিটিং করে অর্থ উপার্জন করা যায়। অতএব, লেখাটি আর দীর্ঘ না করে, মূল আলোচনা শুরু করি।

ভিডিও এডিটিং কি? 

সহজ ভাষায় বলতে গেলে, ভিডিও এডিটিং হল কাট, ট্রিম, ও ক্লিপকে ধারাবাহিকভাবে সাজিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ ভিডিওতে রুপ দান করা যেখানে থাকবে না কোনো কলহ, থাকবে না কোনো অবান্তর কিছু। তাছাড়াও আছে কালার গ্রেডিং, এনিমেশন এড, এবং প্রি-প্রোডাকশন স্টোরিরাইটিং এর কাজ। সব মিলিয়ে, একজন ভিডিও এডিটর হল একটি ভিডিওর প্রাণদাতা। যাইহোক, এখন আসি কোন কোন সফটওয়্যার ব্যবহার করে প্রফেশনাল ভিডিও এডিটিং করতে পারেন, সে প্রসঙ্গে।

আপনি যদি এডিটিং এ নতুন হয়ে থাকেন, তাহলে যে সফটওয়্যার ব্যবহার করবেন –

★ ক্যামটাসিয়া (Camtasia)

★ ব্ল্যান্ডার (Blender)

★ নেরো ভিডিও (Nero Video)

★ মোভাভি ভিডিও এডিট প্লাস (Movavi Video Edito Plus)

যদি ইউটিউব ভিডিও এডিট করতে চান, তাহলে যে সফটওয়্যার ব্যবহার করবেন 

★ এডোবি প্রিমিয়ার প্রো (Adobe Premier Pro)

★ আই মুভি (iMovie)

★ ক্যামটাসিয়া (Camtasia)

★ ফ্রি মেইক (Freemake)

যদি উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের জন্য এডিটিং করতে চান, তাহলে যে সফটওয়্যার ব্যবহার করবেন

★ মুভি মেইক টেন (Movie Maker 10)

★ এডোবি প্রিমিয়ার প্রো (Adobe Premier Pro)

★ ক্যামটাসিয়া (Camtasia)

★ ওপেনশট (Openshot)

★ শর্টকাট (Shotcut)

ম্যাকবুক অপারেটিং এর জন্য যে সফটওয়্যার ব্যবহার করবেন

★ ওপেনশট (Openshot)

★ মুভি মেটর (Movie Mator)

★ আই মুভি (iMovie)

★ ভিডিও এডিটর (Video Editor)

মোবাইল দিয়ে এডিটিং করার জন্য যে সফটওয়্যার ব্যবহার করবেন

★ কাইনমাস্টার প্রো (Kinemaster Pro)

★ ইনশট (Inshot)

★ পাওয়ার ডিরেক্টর (Power Director)

আশা করি, এতক্ষণ এডিটিং সফটওয়্যার সম্পর্কে যথেষ্ট ধারণা পেয়েছেন, তো এখন আসি, কিভাবে এডিটিং করে অর্থ উপার্জন করবেন সে প্রসঙ্গে। এই অংশে বলছি, এডিটিং করে আয় করার ৭টি সহজ উপায়:

১] ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস

বর্তমান সময়ে ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস টাকা আয় করার অন্যতম উৎস। আপনি যদি ভিডিও এডিটিং পারেন, তবে আপনি আপনার দক্ষতা আপওয়ার্ক (Upwork), ফাইভার (Fiverr) মতো বিভিন্ন ডিজিটাল মার্কেটপ্লেসে উপস্থাপন করে মোটা অঙ্কের টাকা আয় করতে পারেন। কেনন এই মার্কেটপ্লেসগুলোতে ভিডিও এডিটরের প্রচুর চাহিদা। 

২] বিবাহ ভিডিও ফুটেজ এডিটিং

প্রযুক্তির বিপ্লব ঘটায়, মানুষ আজ নিজের বিয়ের সামগ্রিক আয়োজন প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে পৌঁছে দিতে চায়। সে অর্থে, মানুষ আজ প্রবল হারে ভিডিওগ্রাফারের দ্বারস্থ হচ্ছে । শুধু তাই নয়, সেই ভিডিওটি কতটা সুন্দররূপে  সংরক্ষণ করা যায় সে ভাবনায়ও তারা বেশ সচেতন। যে কারণে, একজন ভিডিওগ্রাফারের পাশাপাশি একজন ভিডিও এডিটরও তাদের দরকার হয়। যত টাকা লাগে তত দিয়ে হলেও একজন এডিটর তাদের লাগবেই। আর এই বিবেচনায়, বিবাহ অনুষ্ঠান ক্ষেত্রটি হতে পারে একজন ভিডিও এডিটরের টাকা উপার্জন করার অন্যতম উৎস।

৩] ভিডিও এডিটিং কোর্স

এডিটিং করে আয় করার উৎস যখন দ্বিগুণ, তখন কে চায় বেকার থেকেও ভিডিও এডিটিং এর কাজ না শিখতে। অনেকেই চায় আবার কেউ কেউ ভালো লাগাতে শিখতে চায়। যে কারণে একজন ট্রেনার মূখ্য হয়ে উঠে। অতএব, আপনি যদি ভালো এডিটিং পারেন, তবে একজন ট্রেনার হিসেবে অনেক টাকা উপার্জন  করতে পারবেন। 

৪] ব্লগ এডিটিং

বিশ্ব যখন একটি গ্রাম, তখন ইতিহাস, ঐতিহ্য বা মানুষের জীবনযাত্রা কারোরই অজানা কিছু না। তবে জানানোর প্রসঙ্গে আজকাল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে ভিডিও ব্লগাররা; কেউ ব্লগ করছে খাবার নিয়ে, কেউ ঐতিহাসিক স্থান নিয়ে, কেউবা ভ্রমণ নিয়ে কিংবা কেউ নিজের জীবনচক্র নিয়ে। তবে ব্লগ করতে গিয়ে অনেক সময় প্রাথমিক ভিডিওটি দেখার উপভোগ্য হয়ে উঠে না। সে কারণে, ভিডিওটি মার্জিত করা মূখ্য বিষয় হয়ে উঠে। আর তাই দরকার পড়ে একজন পেইড ভিডিও এডিটরের। এই বিবেচনায়, এই ক্ষেত্রটিও একজন ভিডিও এডিটরের জন্য অর্থ উপার্জন করার উৎস হতে পারে।  

৫] শিক্ষামূলক ভিডিও তৈরি

ইউটিউব যখন হাতের মুঠোয়, তবে আপনি কেন বেকার থেকেও হাত গুটিয়ে বসে আছেন? আরে ভাই, কন্টেন্ট তৈরি করুন। আপনি যদি ভিডিও এডিটিং পারেন, তবে কিভাবে একটি ভিডিও এডিটিং এর মাধ্যমে দর্শক উপভোগ্য করা যায় তা উপস্থাপন করে শিক্ষামূলক কন্টেন্ট তৈরি করুন। অতঃপর 1k সাবসক্রাইবার হলে একাউন্টটি মনিটাইজ করে ডলার উপার্জন করুন।  

৬] ইউটিউবারদের ভিডিও এডিটিং

প্রযুক্তির যুগে, আমরা সবাই ইউটিউবার হতে চাই। এ নেশা ২০০৫ সাল থেকে শুরু হয়েছে। তবে যুগ পাল্টাতে, বদলে যাচ্ছে ইউটিউবারের সংখ্যা ও কনটেন্টের ধরণ। সে অর্থে সব ইউটিউবারই চায় নিজের কনটেন্টের গুণগত মানসম্পন্ন রাখতে। যে কারণে তারা টাকার বিনিময়ে চায় একজন দক্ষ ভিডিও এডিটর। আপনি যদি একজন দক্ষ ভিডিও এডিটিং হয়ে থাকেন, তবে ঐ জায়গাটি আপনার জন্য। 

৭] বিজ্ঞাপন এডিটিং

ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রাণ হল বিজ্ঞাপন। যে যত নিজের ব্যবসার বিজ্ঞাপন দিতে পারবে, সে তত  কাস্টমার পাবে, পাবে তত লভ্যাংশ। উদাহরণ হিসেবে বলতে হয়, Amazon, Apple, Ali baba.com এর কথা। অতএব, আজকাল সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানই চায় পণ্যের অধিক বিজ্ঞাপন দিতে। যে কারণে তারা ভিডিওগ্রাফির মাধ্যমে বিজ্ঞাপন তৈরি করে। আর ভিডিও এডিটিং এর জন্য হায়ার করে একজন দক্ষ এডিটর। আপনি যদি একজন দক্ষ এডিটর হয়ে উঠতে পারেন, তাহলে এই ক্ষেত্রটিও আপনারকে মোটা অঙ্কের টাকা এনে দিবে।

সর্বোপরি, আমার মনে হয় ভিডিও এডিটিং কাজটা একটু জটিল হলেও ততটা কঠিন নয়। একবার যদি কেউ শিখতে পারে, তবে তার আয় করার উৎসের অভাব হয় না। উল্লেখ্য, ৭টি সহজ উপায়ের কথা বললেও ভিডিও এডিটিং করে অর্থ উপার্জন করার উৎস কিন্তু  অনেক। সুতরাং, এই গুণটি অর্জন করতে পারেন।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *